জেনে নিন সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ ও প্রতিকার
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহঃ বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত এবং মর্মস্পর্শী ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনা। আজকাল খবরের পত্রিকা খুললেই, মোবাইল ফোন হাতে নিতেই চোখে পড়ে এমন অসংখ্য নিউজ। কেউ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে সারা জীবনের জন্য পুঙ্গুত্ব বরণ করছে কেউবা এই মহামূল্যবান জীবনটা অকালেই হারিয়ে ফেলছে।
আর তাইতো স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে– সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ কি? সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটে? সবচেয়ে বেশি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায় কারা ইত্যাদি এ সম্পর্কে। তাহলে আসুন আমাদের আজকের এই ছোট্ট প্রবন্ধের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ এবং সড়ক দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণের উপায় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহঃ
সড়ক দুর্ঘটনার নির্দিষ্ট একটি কারণ নেই। মূলত সড়ক দুর্ঘটনা বা অ্যাক্সিডেন্টের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেঃ
- অতিরিক্ত গতি এবং ওভারটেকিং
- ওভার লোডিং
- প্রশস্ত রাস্তা
- ট্রাফিক আইন অমান্য
- অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
- অপ্রতুল পরিবহন ব্যবস্থা
- ফিটনেস বিহীন যানবাহন
- অদক্ষ চালক
- অদক্ষ হেল্পার
- অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস
- নেশাগ্রস্ত যানবাহন চালক প্রভৃতি।
এর বাইরেও বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেগুলো সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এই বিষয়ে পরবর্তী স্টেপে আলোচনা করব তবে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ জানার পূর্বে অবশ্যই সড়ক দুর্ঘটনা কাকে বলে? সড়ক দুর্ঘটনার প্রভাব এই বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরী।
সড়ক দুর্ঘটনা কাকে বলে?
সাধারণত রাস্তায় বিভিন্ন কারণে যে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় তাকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে। এটি মূলত একটি অকল্পনীয় বা আকস্মিক ঘটনা, যা অমনোযোগী কিংবা প্রয়োজন অপ্রয়োজনের কারণে ঘটে থাকে এবং ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করে।
সড়ক দুর্ঘটনা কত প্রকার ও কি কি?
মূলত দুর্ঘটনার কোনো নির্দিষ্ট প্রকারভেদ নেই। ঘটনা পরম্পরায় দুর্ঘটনার সংজ্ঞা ভিন্নতর হয়ে থাকে। তাই সড়ক দুর্ঘটনার নির্দিষ্ট কোন প্রকার নেই। যেহেতু দুর্ঘটনা মূলত একটি আকস্মিক ঘটনা যা অমনোযোগী বা আচমকা ভাবে হয়ে থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবে যেগুলো আমাদের স্বাভাবিক জীবনে বাধা সৃষ্টি করে সে সকল ঘটনাগুলোই দুর্ঘটনা। যেমনঃ
- গাড়ি এক্সিডেন্ট
- অগ্নিকাণ্ড
- সাপে কাটা
- উচ্চ স্থান থেকে পড়ে যাওয়া
- পানিতে ডুবে যাওয়া ইত্যাদি।
সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটে?
সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মূলত নয়টি কারণকে প্রধান কারণ হিসেবে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছি। এ পর্যায়ে আবারও সড়ক দুর্ঘটনার সেই বাছাইকৃত নয়টি কারণ সম্পর্কে আপনাদেরকে অবগত করব। যথাঃ
- যানবাহনের বেপরোয়া গতি
- পন্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন
- ফিটনেস বিহীন যানবাহন
- পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করা
- অদক্ষ চালক
- হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো
- গাড়ি চালকদের মধ্যে রেষারেষি
- নিজের তৈরি করা আইন
- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
তাছাড়াও বর্তমানে যানবাহন চালকদের বেশিরভাগ মানুষই মাদকাসক্ত। বর্তমানে এই মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের পরিসীমাটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাইতো সড়ক দুর্ঘটনার পরিসীমাটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত।
সবচেয়ে বেশি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায় কারা?
যে সকল ড্রাইভার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন তারাই মূলত সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিক বেশি দায়ী। ন্যাশনাল হাইওয়ে সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুসারে— পুরুষরা প্রতিবছর প্রায় 6.1 মিলিয়ন দুর্ঘটনা ঘটায়। অন্যদিকে মহিলারা প্রতিবছর ৪.৪ মিলিয়ন দুর্ঘটনা ঘটায়।
এমনকি নিশি গান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন গবেষণা ইনস্টিটিউট অনুসারে এটা জানা যায় যে— ১০৫.৭ মিলিয়ন মহিলার ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে অপরদিকে ১০৪.৩ মিলিয়ন পুরুষের কাছে রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাকিগুলো লাইসেন্স ছাড়াই নিজ নিজ গাড়ি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছেন।
তাই যে বা যারা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন– সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কারা অধিক বেশি দায়ী? মহিলা নাকি পুরুষ? তাদের প্রশ্নের উত্তর এটাই হবে সেটা হল সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অধিক বেশি দায়ী পুরুষ জনগোষ্ঠী। যারা নিজেদের লাইসেন্স ছাড়া, প্রশিক্ষণ না নিয়েই যানবাহন নিয়ে রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়েন এবং সড়ক দুর্ঘটনার পরিবেশ তৈরি করেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার ব্যবস্থা
সড়ক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির অনেকগুলো ব্যবস্থা রয়েছে। মূল কথা– সবাই যদি একটু সতর্কতা অবলম্বন করে এবং গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য প্রতিকার ব্যবস্থা গুলো গ্রহন করা অতীব জরুরি। তাহলে চলুন এবার জেনে নেই সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার ব্যবস্থা হিসেবে কি কি পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে।
বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হল বেপরোয়া গতি। তাই গাড়িগুলোর ব্যবহার গতি যদি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা সম্ভব হয় তাহলে সড়ক দুর্ঘটনার মত বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। আপনি যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখতে পাবেন গাড়ি চালানোর সময় ট্রাক এবং মেনে বাস বা দূর পাল্লার বাস চালকদের মধ্যে কখনো কখনো প্রতিযোগিতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
তখন তারা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর এই কারণে আচমকা জনক ভাবে মর্মান্তিক অ্যাক্সিডেন্ট ঘটে, যা কেড়ে নেয় অসংখ্য পরিবারের কর্মঠ মানুষকে, হারিয়ে যায় অকালে অনেকেরই জীবনের প্রান পাখি। তাই প্রথমত ব্যবহার গতি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসাটা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতীরোধের অন্যতম উপায়।
তবে এর প্রতিকার হিসেবে সবার প্রথমে আরও একটি কার্য সম্পন্ন করতে হবে। সেটা হচ্ছে– এমন কোন ব্যবস্থা নিতে হবে যেটা মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করবে বা গাড়িচালকরা মনে মনে ভাববে যে যদি তারা আইন অমান্য করে রাস্তায় গাড়ি চালায় বা ওভারটেকিং করে তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং সেই আইনের চোখ কোন মতেই ফাঁকি দিতে পারবে না।
এর জন্য মূলত সড়ক ব্যবস্থাপনার আইন কঠোর ও জোরালো হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে ড্রাইভারদের মনে সেই ভয়টা কাজ করানোর জন্য রাস্তায় নির্দিষ্ট স্থানে থাকা প্রয়োজন সিকিউরিটি ক্যামেরা। আপনি যদি লক্ষ্য করেন তাহলে এটা নিশ্চয়ই কখনো কখনো দেখবেন যে– কিছু রাস্তা রয়েছে যেগুলো অনেক বাঁকা। তাই স্বাভাবিকভাবে দ্রুতগতির বাসগুলো সেই বাঁকা রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্ট করে অধিক বেশি। তবে এ সময় যদি ড্রাইভাররা একটু সতর্কতা অবলম্বন করে এবং ডিজিটাল কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাহলে খুব সহজেই এই সকল বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব হয়।
যেমন বর্তমান সময়ে সিকিউরিটি ক্যামেরা গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম ও কোয়ালিটি সম্পূর্ণ প্রোডাক্ট হলোঃ Convex mirror. এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং কোয়ালিটি ও প্রাইস জানতে ভিজিট করতে পারেন:- Convex mirror price in bangladesh এই লিংকে।
আরো দেখুন: Zkteco f18 price in Bangladesh
পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা থেকে প্রতিরোধের উল্লেখযোগ্য উপায় ও সতর্কতা সমূহ হলো:
জনসচেতনতা তৈরি করা
মহাসড়কের পাশে হাট বাজার বা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা। ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও রাস্তাঘাটে আইন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। প্রতিমাসে মহাসড়কে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যানবাহনের ত্রুটি বিচ্যুতি পরীক্ষা করা। নিরাপত্তাকে জোরদার করতে সিকিউরিটি ক্যামেরা ব্যবহার করা।
পরিশেষেঃ যেহেতু মানব জীবন একটাই এবং এই জীবনের মূল্য প্রত্যেকের কাছে অনেক বেশি। তাই রাস্তাঘাটে বের হলে একজন সাধারন মানুষ সেই সাথে একজন ড্রাইভার ও যাত্রীদের সবসময় উচিত হবে নিজের এবং অন্যের কথা চিন্তা করে সঠিক নিয়ম শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলাফেরা করা।
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সমূহ ও প্রতিকার সম্পর্কিত আমাদের আলোচনা পর্ব এখানে শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।